শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারে শুটকি উৎপাদন (দুই)
প্রাকৃতিকভাবে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে শুটকি তৈরী করছেন কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক শুটকিপল্লীর আমান উল্লাহ। লবণ, বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত তার এ শুঁটকির দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। সামান্য হলুদের গুড়া মিশিয়ে রোদে শুকানো স্বাস্থ্যসম্মত এসব শুটকি এখন দেশে নয়, বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। শুটকি বিক্রি করে হয়েছেন কোটিপতি।
কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকিপল্লীতে কাচা মাছ পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত জেলেরা-ছবি: কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।
আমানত উল্লাহ কক্সবাজার নাজিরারটেকের শুটকি পল্লীর এক সময়ের শ্রমিক এখন বড় ব্যবসায়ী। হাজারও ভেজালের ভিড়ে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে শুটকি তৈরী করে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরুস্কার। বর্তমানে দেশে-বিদেশে রয়েছে তার অর্গানিক শুটকির সুনাম। দিনদিন এই অর্গানিক শুটকির চাহিদা বাড়তে থাকায় নিজে গড়ে তোলেছেন শাহ আমানত নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভোক্তাদের চাহিদামত প্যাকেজিং করে বাজারজাত করেন তিনি। শুটকি উৎপাদনের সময় লবণ-বিষ-ফরমালিন সহ অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার না হওয়ায় শুটকির প্রাকৃতিক স্বাদ ও গুনগতমান সবই ঠিক থাকে বলে কক্সবাজার ভয়েসকে জানান আমান উল্লাহ।
আমান উল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘দুই যুগের বেশী সময় ধরে সামুদ্রিক শুটকির সঙ্গে বসবাস। এটি তার বাপ-দাদার পেশাও। জীবনে একজন শ্রমিক হিসাবে প্রথম শুটকিতে জড়িয়ে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি। পরে আর কোন পেছনে থাকাতে হয়নি। এখন হয়ে উঠেছেন শুটকি পল্লীর বড় ব্যবসায়ী ও নেতা।’
আমান উল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘এক সময় রোদে শুকিয়ে তার বাপ-দাদারা শুটকি উৎপাদন করত। ওই সময়ে শুটকিরও ব্যাপক স্বাদ ছিল। কিন্তু, এখন সেই স্বাদের শুটকি হারিয়ে গেছে। নানা প্রকার ক্যামিকেলে ভরে গেছে শুটকি। এতে করে স্বাদ যেমন কমেছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য বেড়েছে মারাত্মক হুমকি। একারণে, মাথায় আসে সেই পূর্বেকার দিনে কিভাবে মাছ শুকানোর কথা। কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে শুরু করেন সম্পূর্ণ অর্গাানিকভাবে মাছ শুকানোর পদ্ধতি। সামান্য মরিচ-হলুদের গুড়া মিশিয়ে কোন প্রকার ক্যামিকেল ছাড়াই উৎপাদিত শুটকি প্রথম দফায় ক্রেতাদের নজর কাড়ে। দিন দিন ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছে দেয়। এরপর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আমান উল্লাহর অর্গানিক শুটকির খবর। এখন শুধু দেশে নয়, রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে। গড়ে তুলেছে শাহ আমানত ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ভিড় করছে পর্যটকরাও।
কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকি মহালে অর্গানিক পদ্ধতিতে রূপচাঁদা শুকানো হচ্ছে-ছবি: কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।
আমান উল্লাহ আরও কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘অর্গানিক পদ্ধতিতে শুটকির চাহিদা থাকায় তার দেখাদেখি অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও এখন ক্যামিকেল প্রথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হলুদ-মরিচের গুড়া দিয়ে মাছ শুকানোর দিকে ঝুঁকছে। এতে করে কক্সবাজারের সামুদ্রিক শুটকির সেই পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে আসছে।’
তিনি জানান, ‘অর্গানিক শুটকিতে বিপ্লব দেখে কক্সবাজার মৎস্য অফিসের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন এনজিও। ইতিমধ্যে পেয়েছেন সরকার ঘোষিত জাতীয় মৎস্য পুরুস্কার। তার অর্গানিক শুটকির সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় বেড়েছে ব্যবসার পরিধি। একারণে প্রতিবছর কোটি টাকার উৎপাদন করছে অর্গানিক শুটকি। এতে করে কক্সবাজারের ঐতিহ্যের সামুদ্রিক শুটকির সুনাম ফিরে আসতে আর বেশি দিন নেই।’
কক্সবাজার নাজিরারটেক শুটকিপল্লীতে রোদে শুকানো হচ্ছে শুটকি-ছবি: কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘শুটকী প্রক্রিয়াজাত করণের সময় হলুদ, মরিচের গুড়া মিশ্রিত মাছ সম্পূর্ণ উজ্জল। মাছের গুনগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু হয়। সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েছেন আমান উল্লাহ। আমান উল্লাহ একজন সফল ব্যবসায়ী। অর্গানিক পদ্ধতিতে শুটকি উৎপাদন করে সে এখন কোটিপতি। শুধু আমান উল্লাহ নয়, অর্গানিক শুটকির চাহিদার কথা চিন্তা করে আমান উল্লাহ মত জেলার টেকনাফের শামলাপুর, মহেশখালীর গোরকঘাটায় স্যোলার ড্রাই তৈরী করে মশা-মাছি বিহীন তাপ ধরে রেখে শুটকি তৈরী করার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের।’
এসএম খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি উৎপাদনে মৎস্য বিভাগ জোর দিচ্ছে। গুনগতমান ঠিক রাখতে মনিটর জোরদার করেছি। শ্রমিক-উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখানকার উৎপাদিত শুটকি মধ্যপ্রাচ্য, চীন, হংকং ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।’
কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকির মানোন্নয়নে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে অর্গানিক শুটকির বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছেন উৎপাদনকারিরা।
ভয়েস/আআ